yesterday, today and tomorrow

সাদিয়া সুলতানা



"কে?"
"তোমার গীতবিতানটঠ¾ দিতে এলাম।"
"খুব ধূলো পড়েছিল না? কতদিন ধরা হয়নি। বই পড়তে ভাল লাগে না এখন।"
"তাহলে বুঝি গান শোনো? মুভি দ্যাখো?"
"না, কোনো কোলাহলই আজকাল ভাল লাগে না।"
"আমারও না, নির্জনতার ভেতরেই শান্তি।"
"হু। এই ভাল,স্মৃতি আর বিস্মৃতির ইঁদুরদৌড়ে ব্যস্ত থাকা।"
"একা থাকলে কিন্তু এক পাহাড় কথাও জমে।"
"আমারও। তুমি এলে কথা ভাগ করি।"
"আমিও।"
"আর কী কী ভাল লাগে?"
"এই যে কেউ আসবে না, তুমিও যাবে না কোথাও-à¦à¦®à¦¨à¦Ÿà ¦¾ ভাল লাগে।"
"আমারও। দুবার ঘর ছেড়েছি। মা বলে, ভাল থাকবে কী করে, বেয়াড়া মেয়ের সংসারই হলো না।"
"আমারও। লোকে বলে।"
"লোকে বলে, তার পাঁজরের হাড় থেকে আমার জন্ম। দুবার জন্মের মতো মৃত্যুও দুবার হলো।"
"আমার একবার। তবে মৃত্যু বলো না, বড় জোর পুনর্জন্ম বলতে পারো।"
"তা বটে, বেঁচেছি বলা যায়।"
"বৃষ্টি পড়ছে।"
"জানালা বন্ধ করে দিবো?"
"না থাক।"
"একটা বিষয় খেয়াল করেছো? আমি তোমার এখানে এলেই বৃষ্টি হয়।"
"বৃষ্টি আমার ভালো লাগে। বিষাদ, অবসাদ সব ধুয়ে নিয়ে যায়। তুমি এলে যেমনটা হয়।"
"তুমি এলেও।"
"কফি খাবে?"
"চিনি দিও না প্লিজ। গতদিন ভুল করেছিলে।" "একটু অ্যামন্ড পেস্ট মেল্ট করি? দারুণ লাগে খেতে।"
"গতকালও দিয়েছিলে। টের পেয়েছি।"
"ভালো লাগেনি বুঝি?"
"মন্দ নয়। তবে আজকের সুগার ফ্রিটা বেশ। একশতে দুশো।"
"তুমি এমন আহ্লাদীপনঠ¾ করলে তোমার চুলগুলো ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে।"
"গতকালও বলেছো।"
"বলেছি কিন্তু ছুঁয়ে দেখিনি।"
"আজ দেখবে?"
"হু।"
"ভাল লাগছে তোমার?"
"হু। তোমার চুল কত নরম, কুসুম রোদের উঞ্চতা মাখা। কোন তেল দাও?"
"কী যে বলো তেল দিই নাকি। শেষ কবে তেল দিয়েছি তা মনেও নেই। সেই মা থাকতে...জবজব করে তেল দিয়ে কলা বেনি করে দিতো মা। বলতো, রাতে শোবার আগে এমন কষে বেনি বাঁধলে চুল লম্বা হবে। লম্বা চুলের মেয়েদের ভাল বিয়ে হয়। বেচারি মা, মেয়ের ভাল একটা বিয়ের জন্য কী চেষ্টাই না ছিল মানুষটার।"
"মায়ের কথা মনে পড়ছে বুঝি? সকালে ফেসবুকে দেখলাম মায়ের সঙ্গে তোলা পুরনো ছবি দিয়েছো।"
"ছবিটা ক্লাস নাইনে তোলা। রেজিস্ট্রৠশনের আগে ফুজি স্টুডিওতে গিয়ে তুলেছি। ঐ দিনও তেলভেজা চুলে বেনি করে দিয়েছিল মা। ছবিতে আমার ভ্রু কুঁচকানো খেয়াল করোনি?"
"করেছি। আমার মা কিন্তু আমার চুল ছোট করে ছেঁটে রাখতো। এখন যেমন, তেমন করে। বলত, চুল তাড়াতাড়ি শুকাবে, উকুনও হবে না। আমি নিজেই কষ্টেসৃষ্ঠŸà§‡ এক ঝুঁটি বাঁধতাম। তারপর বিকেল না হতেই কাঠবিড়ালিঠমতো দিতাম ছুট। কার বাগানে ফুল ফুটেছে, কার পেয়ারা গাছে পেয়ারা ধরেছে, কোন উঠানে টক মিষ্টি বড়ই ঝরছে টুপটাপ। এই করতে করতে একদিন মনি কাকার বাগানে আটকে গেছি। তখন সন্ধে। মনি কাকা আধো অন্ধকারে আমার ফ্রকের নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিলো। হাতটা প্রথমে বুকে উঠল, তারপর তলপেটের নিচে। আমি কাকার হাত কামড়ে এক ছুটে দৌড়ে গেলাম বাড়ি। মাকে সব বললাম। পরের দিন সকালে মনি কাকা এক কাপ চিনি চাইতে এলে মা কী হেসে হেসেই না কাকার সঙ্গে কথা বলল! আর বিকেল হলে আমার দিকে চোখ পাকিয়ে বলল, তোর বাইরে যাওয়া বন্ধ। "
"à¦›à§‡à¦²à§‡à¦¬à§‡à¦²à¦¾à ¦° সব গল্প আনন্দের হয় না জানো তো। আমার পা একবার রতন মামার সাইকেলের চেইনে পেঁচিয়ে গেল। বাম পায়ের গোড়ালি দুভাগ হয়ে কত রক্ত যে পড়লো! দশটা স্টিচ লেগেছিল। পাঁচ থেকে ছমাস হাঁটতে পারিনি। ইনফেকশনও হয়ে গিয়েছিল কাটা জায়গায়। মা আমাকে কোলে করে বাথরুমে নিতো। বলত, তোর বাবা এলে ভাল ডাক্তার দেখাবো। আমি জানতাম বাবা আসবে না। বাবা সেই সময়ে সিঙ্গাপুরৠ‡à¦‡ এক à¦¬à¦¿à¦¦à§‡à¦¶à§€à¦¨à¦¿à¦•à ‡ বিয়ে করেছিল। সংসারের টাকা পাঠানোও বন্ধ করেছিল।"
"মন খারাপ হচ্ছে? বাদ দাও। এসো চুল বেঁধে দিই।"
"মন খারাপ না। হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি এলে এমন হয়। একলা ঘরে বসে টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনি, আমাদের পুরনো বাড়ির লাল মেঝের শীতল স্পর্শ পাই পায়ে। আর চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিতে গেলে মায়ের হাতে লাগানো লেবু গাছের ফুলের ঘ্রাণ পাই। চোখ খুললে দেখি দরজায় কেউ কড়া নাড়ছে আর বাবার খাম এসেছে ভেবে মা পায়ে শাড়ি জড়িয়ে-মাড়িৠŸà§‡ ছুটছে।"
"কাঁদছো?"
"না। এমন সময়ে কেউ স্পর্শ করলে চোখ জ্বালা করে।"
"আহা, বললে না তো চুলে কী দাও!"
"হাহাহা, মায়ের কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে রোজ শ্যাম্পু দিই। আর ইদানীং সপ্তাহে একদিন à¦…à§à¦¯à¦¾à¦²à§‹à¦­à§‡à¦°à ¾ জেল দিই। ঐ যে ঐ গাছটা, তুমি দিয়েছিলে। জানো গাছে বেশ জলঠাসা পাতা বেরিয়েছে। কাজে লাগছে খুব।"
"ভেবেছি তোমাকে আরেকটা গাছ দিবো।"
"আচ্ছা। বৃষ্টি পড়ে পড়ে মাটি থেকে বেশ ভাপ উঠছে। গরম লাগছে। à¦‡à¦²à§‡à¦•à¦Ÿà§à¦°à¦¿à¦¸à ¿à¦Ÿà¦¿à¦“ চলে গেল। এই এক ঝক্কি, একটু হাওয়া না বইতেই পাওয়ার কাট করে দেয়।"
"শাড়িটা সরিয়ে রাখো। আরাম পাবে।"
"তুমিও রাখো। কে দেখছে এখানে।"
"আমি দেখছি। খুব সুন্দর তুমি। ফুলের মতো সুন্দর বললে বেশ ন্যাকা ন্যাকা শোনায়।"
"তুমিও সুন্দর।"
"শুনবে না কী ফুল?"
"কী ফুল?
" ব্রুনফেলসঠয়া। যখন আড় ভাঙো তখন এক রং, যখন পাপড়ি মেলো তখন হরেক রঙের।"
"তাই বুঝি। মা বলতো, আমার শ্যামলা মেয়ে। আসলে কী বলো তো, মা কালী।"
"উহু। এখন পার্পেল। ব্রুনফেলসঠয়া প্রস্ফুটনৠর প্রথম স্তর।"
"কখনো দেখিনি। কেমন দেখতে?"
"বললাম না তোমার মতো।"
"ধ্যাত।"
"ফুলের পাপড়িতে ঠোঁট রাখি?"
"হু।"
"চুপ করে গেলে যে।"
"বৃষ্টি থেমেছে।"
"ফেরার কথা ভাবছো?"
"না। ফুলের কথা ভাবছি, দেখতে লোভ হচ্ছে। আমার মতো বললে যে।"
"এই ফুল ইচ্ছেমতী, রং বদলায় ইচ্ছমতো। প্রথমে গাঢ় বেগুনি, তারপর ফিকে। এরপর ধীরে ধীরে নীলচে গোলাপি আর সাদা।'
"এই ফুলেরই গাছ দেবে আমাকে? সত্যি?"
"দেবো।"
"নামটা কী যেন বললে? মাগো শক্ত বড়।"
"সহজ নামও আছে।"
"কী নাম?"
"yesterday, today and tomorrow"
"বেশ নাম।"
"দেখতেও বেশ।"
"আমার মতো?"
"হ্যাঁ, তোমার মতো।"
"যাই।"
"আবার আসবে তো?"
"আসবো... আগামীকাল...ঠুলের নামটা কী যেন বললে?"
"yesterday, today and tomorrow. "